ভিড়ের মধ্যে তর্কটা যে জমে উঠেছে- তা স্প্যানিশের ছিটেফোঁটা না বুঝলেও আঁচ করা যাচ্ছিল বেশ। অপেক্ষাকৃত বয়স্ক সাংবাদিককে ঠান্ডা করার চেষ্টা করছেন চারপাশের সবাই। কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ে আর্জেন্টিনার অনুশীলন শুরু হওয়ার আগেই সে দেশের মিডিয়াকুলে এতটা উত্তেজনা বোধহয় ফ্রান্সকে ফাইনালে পেয়েই। গতবার তো ফরাসিদের কাছে প্রি-কোয়ার্টারে হেরেই বিদায় নিতে হয়েছিল কাজান থেকে।
এবার বোধহয় বদলার কথাবার্তা নিয়ে চর্চা হচ্ছে আর্জেন্টাইন মিডিয়ায়। ধারণাটা ভুল ছিল। আসলে ওই সিনিয়র সাংবাদিক বলতে চাইছিলেন, আর্জেন্টিনার ফাইনাল ম্যাচে ডি মারিয়া হচ্ছে সৌভাগ্যের অ্যালবাট্রস পাখি। ডি মারিয়া থাকলেই কেবল মেসির হাতে ট্রফি ওঠে। তাঁর যুক্তি কেউ খণ্ডানোর চেষ্টা করছিলেন এই বলে যে, ডি মারিয়া থেকেও তো গতবার ফ্রান্সের কাছে হারতে হয়েছিল ৪-৩ গোলে। ডি মারিয়া কেনই বা সৌভাগ্যের প্রতীক হবেন- ব্যাস এ নিয়েই তর্ক জমেছিল সেখানে।
আর্জেন্টিনা মিডিয়াকুলের ফিসফিসানিও এখন ডি মারিয়াকে নিয়ে। হাঁটুতে চোটের কারণে গ্রুপ পর্বের পর বিশ্রামে ছিলেন। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে শেষ কয়েক মিনিট মাঠে নেমেছিলেন অবশ্য। তবে ফাইনালে জাতীয় সংগীত গেয়েই মাঠে নামবেন কিনা, তা নিয়ে ধাঁধায় আছেন অনেকে। যদিও কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ে মেসিদের অনুশীলন কাভার করতে যাওয়া সাংবাদিকদের অনেকেই জানালেন, ফাইনালে মেসিও নাকি খুব করে চাইছেন ডি মারিয়াকে নিয়েই শুরুর স্কোয়াড সাজাতে।
তাহলে কি মেসিও মনে করেন, ডি মারিয়াই হচ্ছেন তাঁর সৌভাগ্যের পাখি? হতেই পারে, কেননা ১৪ বছর আগে বেইজিংয়ের সেই বার্ডস নেস্ট স্টেডিয়াম থেকেই তো সোনালি বন্ধুত্বের শুরু তাঁদের। নাইজেরিয়াকে হারিয়ে সেই কিশোর আর্জেন্টিনায় মেসি, ডি মারিয়া আর আগুয়েরোর বন্ধুত্ব শুরু। এর পর বয়সের সঙ্গে সঙ্গে ক্লাবের ঠিকানা বদল হলেও জাতীয় দল হলেই এই ত্রয়ীর বন্ধুতে কখনোই পলি জমেনি। সার্জিও আগুয়েরো হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে অস্ত্রোপচারের পর এখন আর মাঠে সঙ্গ দিতে পারেন না মেসিকে, যদিও বিশ্বকাপে এসেছেন তিনি। শুরুর দিকে সৌদি আরবের বিপক্ষে হারার পর আগুয়েরোকে আটকে দেওয়া হয়েছিল আর্জেন্টিনার অনুশীলন ক্যাম্পে, যা শুনে মেসিও নাকি ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন। তার পর থেকে কিন্তু আগুয়েরো নিয়মিত দলের সঙ্গে। ম্যাচের দিন টানেল পর্যন্ত মেসিদের সঙ্গে থাকেন। আবার অনুশীলনেও দেখা যায় তাঁকে।
আগুয়েরোর মতো ডি মারিয়াও মেসির বিশ্বস্ত সেনানী। ২০১৪ বিশ্বকাপে যেদিন মারাকানার ফাইনালে চোখ মুছেছিলেন মেসি, সেদিনও চোট ছিল ডি মারিয়ার। ইনজুরির কারণেই সেই ফাইনাল খেলা হয়নি তাঁর। এর পর ২০১৯ কোপা আমেরিকার সেমিফাইনালেও খেলা হয়নি ডি মারিয়ার, ওই চোটের কারণেই। সেবারও ব্রাজিলের কাছে সেমিফাইনালে হেরে যেতে হয় মেসির আর্জেন্টিনাকে। আর যেদিন ফিট হয়ে ফাইনালে পাশে থাকেন ডি মারিয়া, সেদিন যেন সোনা হাসি লেগে থাকে মেসির মুখে।
২০২১ কোপা আমেরিকার ফাইনালে এই ডি মারিয়ার একমাত্র গোলেই ব্রাজিলকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল আর্জেন্টিনা। তাই প্রথমত, দ্বিতীয়ত এবং শেষ পর্যন্ত এই ডি মারিয়াকেই চায় মেসির। কিন্তু কার বদলে কোন ছকে খেলবেন ডি মারিয়া? লিসান্দ্রো মার্টিনেজ আর পারদেসের জায়গাতে কি ডি মারিয়াকে খেলাবেন? আর্জেন্টিনা কোচ নাকি ফাইনালের জন্য তিনটি সেট তৈরি করে রেখেছেন। যার একটি বেশ আক্রমণাত্মক ৪-৩-৩। তিন ফরোয়ার্ড নিয়ে ফরাসি ডি-বক্সেও সামনে থাকা। সেখানে ডি মারিয়ার সরব উপস্থিতি থাকতেই পারে। তবে এটা অন্তত নিশ্চিত যে, ফাইনালে মেসি তাঁর সৌভাগ্যের অ্যালবাট্রস পাখিকে অবশ্যই ওড়ার সুযোগ করে দেবেন।
ফ্যাক্ট
ইনজুরির দাগ
২০১৪ বিশ্বকাপে দাপট দেখিয়ে ফাইনালে যায় আর্জেন্টিনা। কিন্তু সেমিতে চোটের কবলে পড়ে ছিটকে যান ডি মারিয়া। যে কারণে ফাইনালে আর তাঁর নামা হয়নি। শিরোপার মঞ্চে তাঁর অভাব টের পায় আকাশি-সাদারা।
কোপা আমেরিকার নায়ক
২০২১ সালের কোপা আমেরিকায় দুর্দান্ত খেলেন ডি মারিয়া। ফাইনালে ব্রাজিলের বিপক্ষে তাঁর গোলেই শিরোপা জেতেন মেসিরা।
উইংয়ের ত্রাতা
ডি মারিয়া না থাকায় রাইট উইং একেবারে দুর্বল হয়ে পড়ে আর্জেন্টিনার। কোচ লিওনেল স্কালোনি ওই পজিশনে কয়েকজনকে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে চেষ্টা করেও খুব একটা সফল হতে পারেননি।