পল্লী নিউজ ডেস্ক:
জঙ্গি তৎপরতায় জড়িত থাকার অভিযোগে রাজশাহীতে আবদুস সাত্তার নামে একজনকে আটক করেছে পুলিশ, যাকে নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ-জেএমবির দ্বিতীয় প্রধান বা সেকেন্ড-ইন কমান্ড বলছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীটি।
পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার ভোরে বাগমারার মাড়িয়া ইউনিয়নের সাঁকোয়া গ্রামে নিজ বাড়ি থেকে আটক করা হয় সাত্তারকে। তিনি জেএমবির মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত নেতা সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলা ভাইয়ের আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তার বিরুদ্ধে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার একাধিক অভিযোগ রয়েছে।
স্থানীয়রা জানায়, আবদুস সাত্তার ২০০৪ সালের দিকে জেএমবির শীর্ষ নেতা শায়খ আবদুর রহমান ও বাংলা ভাইয়ের সঙ্গে তৎপর ছিলেন। বাগমারায় স্থানীয়দেরকে নির্যাতনের ঘটনায় তার সরাসরি সম্পৃক্ততা ছিল। নির্যাতনে তখন বেশ কয়েকজনের মৃত্যুও হয়।
পুলিশ বলছে, ২০০৪ সালের দিকে বাগমারায় জেএমবি সদস্যরা নির্যাতন চালিয়ে ১০ থেকে ১৫ জনকে হত্যা করে। সে সময় জেএমবির প্রতিটি অভিযানে অংশ নিতেন আবদুস সাত্তার। বাংলা ভাই ও শায়খ আবদুর রহমান ধরা পড়লেও তখন পার পেয়ে যান সাত্তার। এমনকি সহযোগীদের বিরুদ্ধে মামলা হলেও তাতে আসামি করা হয়নি তাকে।
জঙ্গি সংগঠনটির শীর্ষ নেতারা আটক হওয়ার পর সাত্তার কিছুদিন আত্মগোপনে থাকলেও পরে তিনি বাড়ি ফিরে আসেন। সাত্তারের বিরুদ্ধে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার মামলা না থাকলেও বাগমারা থানায় তার বিরুদ্ধে ছিনতাইয়ের পাঁচটি মামলা রয়েছে।
বাগমারা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবুল কালাম আজাদ জানান, মঙ্গলবার দুপুরে জেএমবি সদস্য আবদুস সাত্তারকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। ২০০৩ সালের শুরুর দিকে যাত্রা শুরু করা জেএমবির দুই শীর্ষ নেতাসহ কয়েকজনের ফাঁসি কার্যকর এবং তাদের আস্তানা ধরা পড়লেও সম্প্রতি জঙ্গি সংগঠনটি আবার আলোচনায় এসেছে। গুলশানের অভিজাত রেস্টুরেন্ট হলি আর্টিজানে হামলা চালিয়ে ১৭ বিদেশিসহ ২০ জনকে হত্যার ঘটনায় জেএমবি জড়িত বলে দাবি করেছে পুলিশ। এই ঘটনার পর কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় ঈদের জামাতে হামলার চেষ্টাতেও জেএমবিই জড়িত ছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ। বাহিনীটি বলছে, জঙ্গি সংগঠনটি আবার সক্রিয় হয়ে দেশে নাশকতার চেষ্টা করছে। আর জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযানও জোরালো করেছে পুলিশ।
উত্তরাঞ্চলে ২০০৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে জেএমবি প্রধান শায়খ আবদুর রহমানের পরামর্শে শুরা কমিটির প্রধান সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলা ভাইয়ের নেতৃত্বে কাজ শুরু করে জঙ্গি সংগঠন জাগ্রত মুসলিম জনতা বাংলাদেশ বা জেএমজেবি। পরে তারা পরিচিতি পায় জেএমবি নামে। ২০০৪ সালে রাজশাহীর বাগমারা ও নওগাঁর আত্রাই-রানীনগরে বেপরোয়া হয়ে উঠে সংগঠনটির কর্মীরা।
২০০৪ সালের ২০ মে রানীনগরে ইদ্রিস আলী ওরফে খেজুর আলী ও আব্দুল কাইয়ুম বাদশাকে হত্যা করে বাংলা ভাই ও তার সহযোগীরা। বাদশার মরদেহ উল্টো করে গাছে ঝুলিয়ে রাখা হয় এবং খেজুর আলীকে টুকরো টুকরো করে লাশ পুঁতে ফেলা হয়। গাছে মরদেহ ঝুলিয়ে রাখার ছবি প্রকাশ হলে দেশ জুড়ে পরিচিত হয়ে ওঠে জেএমবির নাম। ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট ৬৩ জেলায় একযোগে বোমা ফাটিয়ে নিজেদের শক্তির জানান দেয় সংগঠনটি।
২০০৬ সালের ৬ মার্চ ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা থেকে বাংলা ভাইকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। এর চারদিন আগে সিলেটে গ্রেপ্তার হন শায়খ রহমান। ঝালকাঠির বিচারক সোহেল আহম্মেদ ও জগন্নাথ পাঁড়ের গাড়িতে বোমা হামলা চালিয়ে তাদের হত্যার দায়ে ২০০৭ সালের ৩০ মার্চ এই দুই শীর্ষ জঙ্গি নেতার ফাঁসি কার্যকর হয়।