নিরাপদ সড়কের দাবির আন্দোলনের সুযোগ নিতে তৃতীয় পক্ষ ঢুকে পড়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফিরে যেতে বলেছেন। একই সঙ্গে গুজবে কান না দিয়ে তথ্য যাচাই করারও আহ্বান জানান তিনি।
রোববার (০৫ আগস্ট) গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ১০ জেলার ৩০০ ইউনিয়ন পরিষদে অপটিক্যাল ফাইবার কানেক্টিভিটির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী।
শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফিরিয়ে নিতে অভিভাবক ও শিক্ষকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তৃতীয় পক্ষ চলে আসছে, হঠাৎ করে ইউনিফর্ম বিক্রি বেড়ে গেছে, পলাশী মোড় থেকে আইডি কার্ড বিক্রি হচ্ছে।
তিনি বলেন, যথেষ্ট হয়েছে আর না, ঘরের ছেলে-মেয়ে ঘরে ফিরে যেতে হবে। লেখাপড়া করতে হবে। আর কোনো বাবা-মায়ের কোল খালি হোক আমি চাই না। কারণ, হারানোর বেদনা আমি বুঝি। অভিভাবকদের প্রতি অনুরোধ, সন্তানদের ঘরে ফিরিয়ে নিন। আগুন দিয়ে যারা মানুষ মারতে পারে তাদের পক্ষে যেকোনো কিছু করা সম্ভব।
অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার শঙ্কা প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখানে ঢাকার বাইরে থেকে লোক এসেছে, তাদের কাজ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করা, যখনই আমি এটা জেনেছি, আমি আতঙ্কিত বোধ করছি। শিক্ষার্থীদের এখন যদি কিছু হয়, তবে এর দায়িত্ব কে নেবে।
একটি দল দেশের পরিস্থিতি ঘোলাটে করার চেষ্টা করছে অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এক দল লোক অপপ্রচার চালিয়ে পরিস্থিতি জটিল করার চেষ্টা করছে। দয়া করে কেউ কোনো ধরনের গুজবে কান দেবেন না, মিথ্যা প্রচারে বিভ্রান্ত হবেন না।
শেখ হাসিনা বলেন, আপনার যা-ই দেখেন বা শোনেন, প্রথমে তা যাচাই করে দেখুন। কোনো কিছু যাচাই না করে বিশ্বাস করবেন না। বিশেষ করে স্কুলশিক্ষার্থী ও তরুণদের এ অনুরোধ করছি।
গণমাধ্যমের একটি অংশের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কিছু পত্রপত্রিকা আছে তাদের সুষ্ঠু রাজনৈতিক ধারা পছন্দ নয়। তারা চায় অন্য কিছু ঘটুক। যেটা হলে তারা গাড়িতে পতাকা পায়, মন্ত্রী হতে পারে। যদি এতই শখ তাহলে রাজনীতি করেন না কেন? মিথ্যা তথ্য দিয়ে দেশের মধ্যে অস্থিতিশীল করার কী অধিকার আছে?
শনিবার (০৪ আগস্ট) নিজের রাজনৈতিক কার্যালয়ে হামলার ঘটনা প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, তারা আমাদের দলীয় কার্যালয়ে আক্রমণ করেছে। আমাদের ১৭ জন কর্মী হাসপাতালে। যারা হামলা করেছে তারা ছাত্র হলে তো তাদের ব্যাগে বই থাকবে। পাথর থাকবে কেন?
শেখ হাসিনা বলেন, সেখানে (আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়) নাকি ৪ জনকে মেরে লাশ করে দেওয়া হয়েছে। মেয়েদের ধরে নিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে। এই গুজবের পর ছাত্রলীগ সেক্রেটারি ২০/২৫ জন শিক্ষার্থীকে অফিসে নিয়ে আসে। সেখানে তারা (শিক্ষার্থীরা) তন্ন তন্ন করে সব কিছু খুঁজে দেখেছে। কই তারা কোথাও তো কিছুই পায়নি।
বিগত সময়ে বিএনপি জামায়াতের আন্দোলনের সময়কার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনীক, হৃদয়-এদের মতো মেধাবী শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা আগুন দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। ২০১৮ সালে এসব মেধাবী শিক্ষার্থীদের মতো অনেক শিক্ষার্থীকে, অনেক মানুষকে অতীতে তারা পেট্রোল বোমা মেরে হত্যা করেছে। এদের থেকে সবাইকে বিশেষত কোমলমতি শিক্ষার্থীদের সাবধান থাকতে হবে।
সড়ক নিরাপদ করতে সরকার কাজ করছে
নতুন ট্রাফিক আইন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ট্রাফিক আইন ভেটিংয়ের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এটা ক্যাবিনেটে আসবে তারপর সংসদে গিয়ে সেটা পাস করে দেয়া হবে।
সবাইকে আইন মেনে চলতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, রাস্তায় চলাচলের কিছু নিয়মকানুন রয়েছে তা মানতে হবে। ট্রাফিক আইন রয়েছে তা মানতে হবে।
স্কুল থেকে ট্রাফিক আইন শেখাতে সরকারের উদ্যোগের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্কুল থেকে ট্রাফিক আইন শিক্ষা দিতে হবে। এজন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, অনেক কিছু আমরা আগেই করেছি। এরপরও ওভার ব্রিজ, আন্ডার পাস করছি। রাস্তা পারাপারে ওভারব্রিজ ব্যবহার করতে হবে। কেউ ওভারব্রিজ রেখে রাস্তা দিয়ে হেঁটে পার হলে যদি কোনও দুর্ঘটনা ঘটে তার দায় নেবে কে?
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কিছু বিষয় আছে যেগুলো একদিনে হয় না। যেগুলো বাস্তবায়ন হতে তো একটু সময় লাগবে। তবে আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সিং এর মাধ্যমে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন ‘জাতীয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অবকাঠামো উন্নয়ন (ইনফো-সরকার ৩য় পর্যায়) শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ১০টি জেলার ৩০০ ইউনিয়নের অপটিক্যাল ফাইবার কানেক্টিভিটি এবং নির্মাণ সমাপ্ত ৮টি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র, ২টি নবনির্মিত গ্রিড উপকেন্দ্র ও ২১টি উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুতায়নের উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও সচিবরা উপস্থিত ছিলেন।