বিগত কয়েকদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ফিলিস্তিনপন্থি তথা ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভ-সমাবেশ চলছে। জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যসহ দেশটির বিভিন্ন উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভ এখন তুঙ্গে। শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ ক্যাম্পাসে তাঁবু টানিয়ে ফিলিস্তিনের নিপীড়িত জনতার পক্ষে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ জানাচ্ছে। কিন্তু তাদের বিক্ষোভে বাধা দিচ্ছে পুলিশ। এ পর্যন্ত গ্রেপ্তার হয়েছে ৫৫০ জনের বেশি শিক্ষার্থী।
শিক্ষার্থীদের দাবি, যেসব প্রতিষ্ঠান ইসরায়েলে বিনিয়োগ করছে এবং গাজা যুদ্ধে ইন্ধন দিচ্ছে, তাদের কার্যক্রম যেন বন্ধ করা হয়। বিক্ষোভকারীরা বলছেন, তারা গ্রেপ্তারের ঝুঁকি নিতে রাজি কিন্তু তাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন থামবে না।
বিভিন্ন সংবাদ সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গত সপ্তাহে প্রায় ৫৫০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। হার্ভার্ড, কলম্বিয়া, ইয়েল, ইউসি বার্কলে এবং যুক্তরাষ্ট্রের অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্যাম্পাসে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলেছে, বিক্ষোভগুলো প্রায়শই অনুমোদন ছাড়াই এবং তা প্রতিরোধ করতে পুলিশ ডাকা হয়। ফলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসকদের নির্দেশে আইন প্রয়োগকারীরা আটলান্টার এমরি ইউনিভার্সিটিতে ছাত্র বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে টেজার এবং টিয়ার গ্যাস ব্যবহার করেছে। কর্মীরা বলছেন, দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণে ব্যবহার করা সজ্জা পরিহিত এবং ঘোড়ার পিঠে চড়ে থাকা অফিসাররা টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ ভণ্ডুল করেছে।
বৃহস্পতিবার প্রতিবাদ হয়েছে জর্জিয়ার আটলান্টায় অবস্থিত অ্যামোরি ইউনিভার্সিটিতে। সেদিন পুলিশ কয়েক ডজন বিক্ষোভকারীর ওপর চড়াও হয়ে গ্রেপ্তার করে। এমনকি এক নারী অধ্যাপককেও গায়ের জোরে মাটিতে ঠেসে ধরে হাতকড়া পরায় তারা।
মার্কিন সম্প্রচারমাধ্যম সিএনএন এ-সংক্রান্ত একটি ভিডিও প্রচার করেছে। ভিডিওটি এরই মধ্যে ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওতে দেখা যায়, অ্যামোরি ইউনিভার্সিটির অর্থনীতির অধ্যাপক ক্যারোলাইন ফোলিন পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া শিক্ষার্থীদের বিষয়ে কথা বলতে গেলে এক শ্বেতাঙ্গ পুলিশ কর্মকর্তা তার ওপর চড়াও হয় এবং চোখের পলকেই তাকে মাটিতে শুইয়ে ফেলে।
ভিডিও থেকে আরও দেখা গেছে, একপর্যায়ে অপর এক পুলিশ কর্মকর্তা এসে অধ্যাপক ফোলিনকে চেপে ধরে তার বুকের নিচে চাপা পড়ে থাকা হাতটি বের করে এনে দুই হাতই পিছমোড়া করে এবং হাতকড়া পরিয়ে দেয়।
সিএনএনের শেয়ার করা ভিডিও থেকে দেখা যায়, বৃহস্পতিবার ভোরে অ্যামোরি ইউনিভার্সিটির আটলান্টা ক্যাম্পাসে তাঁবু গেড়ে ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীসহ অন্যরা। এ সময় পুলিশ সেখানে প্রবেশ করে শিক্ষার্থীদের ওপর চড়াও হয়। বিক্ষোভকারীদের কয়েকজনকে গ্রেপ্তারের পর সবাই মিলে চিৎকার দিয়ে ওঠে।
একপর্যায়ে ফোলিনকে যখন মাটিতে ফেলে হাতকড়া পরাতে থাকে পুলিশ, তখন একদল প্রতিবাদকারী তাদের ঘিরে ফেলে এবং পুলিশকে গালি দিতে শুরু করে। এক বিক্ষোভকারী পুলিশকে উদ্দেশ্য করে বলতে থাকেন, তোরা হিটলার! তোরা পাগলা কুকুর! তোরা ফ্যাসিস্ট! তোদের লজ্জা নেই।
তিনি পুলিশ সদস্যদের ওই শিক্ষার্থীকে ‘ছেড়ে দিতে’ বলতে থাকলে পাশ থেকে আরেক পুলিশ কর্মকর্তা এসে তাকে হাত ধরে টেনে নিয়ে ল্যাং দিয়ে মাটিতে ফেলে দেন, আরও এক পুলিশ কর্মকর্তা এতে যোগ দিয়ে ফলিনকে মাটিতে ঠেসে ধরতে সহকর্মীকে সাহায্য করেন। এই দুই পুলিশ কর্মকর্তা অধ্যাপক ফলিনের হাত পিছমোড়া করে বেঁধে ফেলেন। এ সময় ফলিন বারবার বলছিলেন, ‘আমি একজন অধ্যাপক।’
প্রসঙ্গত, যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ছড়িয়ে পড়া ফিলিস্তিনপন্থি এই প্রতিবাদ প্রথমে শুরু হয় কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে, আর তা এখনো শিক্ষার্থীদের এই প্রতিবাদ আন্দোলনের কেন্দ্র হয়ে আছে। বুধবার ও বৃহস্পতিবার ভোররাত পর্যন্ত লস অ্যাঞ্জেলেস, বোস্টন ও টেক্সাসের অস্টিনের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে দুই শতাধিক প্রতিবাদকারী শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী জড়ো হয়ে আবার প্রতিবাদ শুরু করে।