বুধবার, জানুয়ারি 22, 2025

মাদ্রাসা জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালার বৈষম্য ও অসংগতি

১৯ জুলাই ২০১৮ তারিখে মাদ্রাসার জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা প্রকাশিত হয়েছে,তাতে যেমনি ইতিবাচক দিক রয়েছে তেমনি কতিপয় বৈষম্য,সমস্যা ও অসংগতি ও রয়েছে।

সেরা দিক গুলি:

১• দাখিল স্তরে ২৬,আলিম স্তরে ৩৪,ফাজিল স্তরে ৩৫ ও কামিল স্তরে ৪৩ জন শিক্ষক – কর্মচারি নিয়োগ দিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে বেগমান করা ২• আলিম পর্যায়ে উপাধ্যক্ষ সংযোজন করে বৈষম্য দূর করা। ৩• বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগ করা। ৪• ১০ পৃ: ১১. ৪ তে বলা হয়েছে বিধি মোতাবেক যে সমস্ত শিক্ষকগন প্রতিষ্ঠানে আগে নিয়োগ পেয়ছেন কিন্তুু এমপিও পাননি তারা বর্তমান জনবল কাঠামোর পদ অনুযায়ী শূন্যপদে এমপিওভুক্তি পাবেন। ৫• বদলি প্রথা অসাধারন। ৬• চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫ নির্ধারন। ৭• ১২ পৃ: ২২ নং এ বলা হয়েছে অনগ্রসর এলাকা, পাহাড়ী এলাকা, হাওড়- বাওড়,চরাঞ্চল এলাকা,নারি শিক্ষায়, প্রতিবন্ধী প্রভৃতি ক্ষেত্রে এমপিও নীতিমালার শর্ত শিথিল হবে। ৮• কোচিং বানিজ্য ও নোটবুক নিষিদ্ধ করা ৯• ভৌগলিক দূরত্ব ও জনসংখ্যার ভিত্তিতে মাদ্রাসার এমপিও নির্ধারন করা।

বৈষম্য ও অসংগতি:

ক• পৃ: ৮,৭.৩ এ বলা হয়েছে উচ্চস্তর শিক্ষকদের প্রয়োজনে নিন্ম শ্রেনিতে ক্লাস নিতে হবে । খ• ১২ পৃ: ১৮. ৪ এ বলা হয়েছে ম্যানেজিং কমিটি ও শিক্ষক কর্মচারিদের মধ্যে কোন ঝামেলা হলে কোন কারনে বেতনের সরকারি অংশ তুলতে না পারলে পরবর্তিতে এবেতন আর তোলা যাবেনা।এতে ম্যানেজিং কমিটির হাতে শিক্ষক কর্মচারিরা জিম্মি হয়ে যাবে।কারন শিক্ষক – কর্মচারিরর তুলনায় ম্যানেজিং কমিটি ক্ষমতাধর। গ•পৃষ্ঠা ৩ ,৬ এর ঘর আলিমে,পৃষ্ঠা ৫,৬ এর ঘর ফাজিলে জেনারেল প্রভাষকও সহকারি অধ্যাপকে (মানবিক ও সামাজিক বিজ্ঞান)প্রতি বিষয়ে এক জন শিক্ষক নিয়োগের কথা বলা হলে ও পৃষ্ঠা ৬,১৪ এর ঘরে কামিল স্তরে প্রতি বিষয়ে একজন করে নিয়োগ হবে কিনা তা উল্লেখ করা হয়নি। ঘ•সারা দেশে ৯১৩৭ টি মাদ্রাসার মধ্যে ৫২ টি মাদ্রাসায় আরবি বিশ্ব বিদ্যালয় অনার্স কোর্সের অনুমতি দিয়েছে এবং আরবি বিষয় সমূহের চাকরিতে আরবি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স পাস করা ছাত্র- ছাত্রীরা আবেদন ও করতে পারবে উল্লেখ করেছে(১৬ পৃষ্ঠা,১ এর ঘর) কিন্তু অনার্স কোর্সের জন্য একজন জনবল নিয়োগের কথা ও উল্লেখ করা হয়নি। ঙ•জনবল কাঠামোর ৯ পৃষ্ঠার ১১.৩ এর (খ) এ বলা হয়েছে ২০০৬ সালের আগে যারা কামিল পাস করেছে তারা বিএড না করে ও বি এড স্কেল পাবে কিন্তু যারা নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স – মাস্টার্স করেছে তারা বিএড না করলে, বি এড স্কেল পাবেনা।অথচ নিন্দুকেরা বলে কামিল মাস্টার্স সমমান। চ• ৯ পৃষ্ঠায় ১১.৪ এবং ১৬ পৃষ্ঠার ৩ এ বলা হয়েছে প্রভাষকদের মধ্যে যারা ৮ বছর পূর্ন করবে তারা ৫: ২ হারে সহকারি অধ্যাপক হবে অর্থাৎ ৬ নং গ্রেড, বেতন ৩৫৫০০ টাকা।বাকি প্রভাষকরা যোগ্যতা থাকার পরও ১০ বছর পূরন হওয়ার আগ পর্যন্ত২ বছর ঐ ৯ম গ্রেডেই থাকবে, বেতন ২৩৫০০।এই ২ বছর একই যোগ্যতার দুই জনের বেতন পার্থক্য ১২৫০০ টাকা।১০ বছর পুরন হওয়ার পর ৯ম গ্রেড থেকে ৮ম গ্রেড আসবেন বেতন ২৪৫০০। অর্থাৎ ৮ বছর চাকরির পর একই যোগ্যতা সম্পন্ন একজনের বেতন ৩৫৫০০ আরেক জনের ২৩৫০০,এভাবে ১৬ বছর চাকরি পূর্ন হওয়া পর্যন্ত মাত্র ১০০০ টাকা বেশি পেয়ে অন্যজনকে অপেক্ষা করতে হবে।ঘৃন্য এই পাপাচার প্রথা অবিলম্বে বাতিল করতে হবে। অন্যদিকে ১০ বছর চাকরির পর সহকারি শিক্ষক ১০ম গ্রেড থেকে ৯ম গ্রেডে আসবেন যার বেতন হবে ১৭৫০০ থেকে বেড়ে ২৩৫০০ অর্থাৎ ১০ বছর চাকরির পর প্রভাষকের বাড়লো মাত্র ১০০০ টাকা, সহকারি শিক্ষকের ৬০০০ টাকা। ছ• বর্তমানে মাদ্রাসাতে অনেক প্রভাষক আছেন যারা ১০ বছর চাকরির পর ৯ম গ্রেড থেকে ৭ম গ্রেডে চাকরি করছেন।একই প্রতিষ্ঠানে আরেকজন ১০ বছর পর ৮ম গ্রেডে চাকরি করবেন, একজন ২৯৫০০ টাকা আরেকজন ২৪৫০০ টাকা পাবেন। জ•সরকার বলে কামিল মাস্টার্স সমমান।আলিম,ফাজিল,কামিল মাদ্রাসার প্রিন্সিপ্যাল, ভাইস প্রিন্সিপাল পদে চাকরির জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতা দেওয়া হল (১৭ পৃষ্ঠার ৯,১৬ পৃষ্ঠার ১,১৭ পৃষ্ঠার ৬ এর ঘর) কামিল/ স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমমান ডিগ্রি তার মানে বোঝায় প্রিন্সিপাল / ভাইস প্রিন্সিপাল পদে স্যার ও হুজুররা আবেদন করতে পারবে কিন্তু (১৭পৃ: ৯,১৬ পৃ: ৬ এর ঘর) অভিজ্ঞতায় দেখা যায় আরবি বিষয়/ ধর্মতত্ত্ব বিষয়ের হুজুররা ছাড়া অন্য কোন জেনারেল শিক্ষক প্রিন্সিপাল পদে আবেদন ই করতে পারবেনা।যদি হুজুর- স্যার ব্যবধান না রেখে প্রভাষক থেকে সহকারি অধ্যাপক হওয়া যায় তাহলে প্রিন্সিপাল ও ভাইস প্রিন্সিপ্যাল কেন হওয়া যাবেনা। ঝ• ১৯ পৃ: ১৬ নং এবং ২৩ পৃ: ৩৫নং এ বলা হয়েছে গ্রন্থাগারিক ও সহকারি গ্রন্থাগারিক পদে কামিল পাস ছাড়া হবেনা।কামিল মাস্টার্স সমমান হলে,কামিল পাসে গ্রন্থাগারিক ও সহ গ্রন্থাগারিক হতে পারলে মাস্টার্স পাস করে তা পারবে না কেন? ঞ• ১০ পৃ: ১৩ নং এ বলা হয়েছে একই দিনে এমপিও ভুক্ত হলে যার বয়স বেশি তিনি পদান্নতি পাবেন, এই ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা বিবেচিত হবেনা।বিষয়টি মেধাবিদের প্রতি বৈষম্য।সেরা ছাত্রটিকে শিক্ষকতায় প্রাধান্য না দিলে শিক্ষা ব্যবস্থা পিছিয়ে যাবে।এই প্রথা বাতিল অত্যাবশ্যক।ট• মাদ্রাসা অধিদপ্তর নিয়ন্ত্রন কারী ,মাদ্রাসা বোর্ডের চেয়ারম্যান, সহকারি সচিব,উপসচিব ও যুগ্ম সচিব,অতিরিক্ত সচিব ও সচিব কামিল পাস নন,তথাপিও তারা যদি জেনারেল হয়ে মাদ্রাসা পরিচালনা করতে পারেন তাহলে তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সেরা ছাত্রটি কেন প্রিন্সিপ্যাল ও ভাইস প্রিন্সিপাল হতে পারবেনা।কার স্বার্থে হুজুরদের জন্য প্রিন্সিপালের কোটা প্রথা রাখা হয়েছে। এভাবে মাদ্রাসা শিক্ষার প্রতি বৈষম্যমূলক সিদ্ধান্ত হলে মাদ্রাসা শিক্ষকরা তা মেনে নিবেনা।মাদার অব হিউম্যানিটি, বিশ্বনেত্রী, মাননীয় প্রধান মন্ত্রী আপনি বিষয়টি দেখুন,জানুন,বৈষম্য ও অসংগতি বাতিল করুন।

 

লেখক: ফিরোজ আলম, সাধারন সম্পাদক, বাংলাদেশ মাদ্রাসা জেনারেল টিচার্স এসোসিয়েশন, লক্ষীপুর জেলা,  প্রভাষক ও বিভাগীয় প্রধান, আয়শা (রা:) মহিলা কামিল মাদরাসা, লক্ষ্মীপুর।

সর্বশেষ খবর

BN