ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোতে সিরিজ ড্রোন হামলার মধ্যেই গতকাল সোমবার রুশ প্রেসিডেন্ট ভদ্মাদিমির পুতিন সফরে গেলেন প্রতিবেশী দেশ বেলারুশে। দেশটির প্রেসিডেন্ট ও তাঁর অন্যতম মিত্র আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কোর সঙ্গে বৈঠকে ইউক্রেনে স্থল হামলায় যোগ দিতে তাঁকে চাপ দেবেন পুতিন- এমনটা বলা হলেও তা নাকচ করে দিয়েছে ক্রেমলিন। এদিকে, সোমবার ভোরে কিয়েভে ৩৫টির মতো ড্রোন হামলা চালায় রুশ বাহিনী। ইউক্রেনীয় কর্মকর্তাদের দাবি, দেশটির বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা অন্তত ১৫টি ড্রোন ধ্বংস করতে সক্ষম হয়েছে। খবর আলজাজিরার।
পুতিনের এ সফর দেশটিতে ২০১৯ সালের পর এবারই প্রথম। বিমানবন্দরে পৌঁছলে সেখানে তাঁকে স্বাগত জানান প্রেসিডেন্ট লুকাশেঙ্কো ও শীর্ষ কর্মকর্তারা। এ সময় পুতিনকে বেশ উৎফুল্ল দেখা যায়।
এর আগে লুকাশেঙ্কো জানিয়েছিলেন, পুতিনের এই সফরে গোটা অঞ্চলের সামরিক-রাজনৈতিক পরিস্থিতির পাশাপাশি অর্থনৈতিক সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হবে। অবশ্য পর্যবেক্ষকরা বলছেন, বেলারুশকে ইউক্রেন যুদ্ধে যুক্ত করতেই পুতিনের এই সফর।
তবে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, এ ধরনের সংবাদ ভিত্তিহীন ও মূর্খতা। সফরের আগে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ মিনস্কে বেলারুশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই আলেইনিকের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। এ বিষয়ে দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, তাঁরা পশ্চিমের অবৈধ নিষেধাজ্ঞা মোকাবিলার চেষ্টাসহ নানা বিষয়ে আলোচনা করেছেন।
সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীদের ওপর সহিংস দমনপীড়ন চালিয়ে লুকাশেঙ্কো ক্ষমতায় রয়েছেন। বেলারুশের সীমান্ত ব্যবহার করে আগামী জানুয়ারিতে ইউক্রেনের তিনটি অঞ্চলে রাশিয়া হামলা চালাতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন ইউক্রেনীয় জেনারেলরা। এমন প্রেক্ষাপটে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রোববার বলেছেন, মস্কো এবং তাঁর মিত্রদের বিরুদ্ধে যে কোনো হামলা প্রতিরোধে প্রস্তুত কিয়েভ। এর আগেও যুদ্ধের শুরুতে ইউক্রেনে হামলায় নিজ ভূখণ্ড রাশিয়াকে ব্যবহারের সুযোগ দিয়েছেন লুকাশেঙ্কো। গত নভেম্বরে যৌথ সামরিক প্রশিক্ষণ নেয় রাশিয়া ও বেলারুশ।
কিয়েভের মেয়র ভিটালি ক্লিটসকো জানিয়েছেন, সোমবারের হামলায় গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর গভর্নর ওলেক্সি কুলেবা বলেছেন, ইরানি কামিকাজে ৩৫টি ড্রোন হামলা চালিয়েছে রুশ বাহিনী। এতে কিয়েভ অঞ্চলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তিনটি এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে।
এদিকে, লাটভিয়ায় পশ্চিমা নেতাদের এক বৈঠকে আরও অস্ত্র ব্যবস্থা সরবরাহ করার আহ্বান জানিয়েছেন জেলেনস্কি। ভিডিও কনফারেন্সে তিনি নেতাদের উদ্দেশে বলেন, ‘অবশ্যই রাশিয়ার আগ্রাসন ব্যর্থ হবে। এখন প্রধান কাজ হলো- দ্রুত তাঁদের পরাজয় নিশ্চিত করা। দখলদারদের পরাজয় ত্বরান্বিত করতে আপনাদের সব ধরনের সহায়তা করার আহ্বান জানাচ্ছি।’
এ আহ্বানে সাড়া দিয়ে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক ইউক্রেনের জন্য আরও ৩০ কোটি ডলারের সামরিক সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দিতে যাচ্ছেন। যুক্তরাজ্যের নতুন এই সহায়তার মধ্যে থাকবে- কয়েক লাখ রাউন্ড আর্টিলারি গোলাবারুদ, যা আগামী বছরজুড়ে ইউক্রেনে ক্রিটিক্যাল আর্টিলারি গোলাবারুদের জোগান নিশ্চিত করবে। যৌথ অভিযান বাহিনীর (জেইএফ) ওই সভায় সদস্যদের সঙ্গে নর্ডিক এবং বাল্টিক অঞ্চলে রুশ আগ্রাসন মোকাবিলায় চলমান প্রচেষ্টার বিষয়ে আলোচনা হবে। এদিকে সোমবারও রাজধানী কিয়েভসহ গোটা ইউক্রেনে বিমান হামলার সতর্কতা জারি করে আঞ্চলিক সামরিক প্রশাসন।