স্টাফ রিপোটার :প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদের ছুটি উপভোগ করতে রাজধানী ছাড়ছেন ঘরমুখো মানুষ। বাড়ি ফেরার পথে সবচেয়ে বড় ভোগান্তি যাতায়াত। যাত্রীবাহী পরিবহনগুলোর কোথাও কোনো ঠাঁই নেই। টার্মিনালগুলোতে যাত্রীদের উপছে পড়া ভিড়। তবু সব বাধা উপক্ষা করে বৃষ্টির মধ্যেও সবাই ছুটছেন বাস, ট্রেন কিংবা লঞ্চের দিকে। ভাড়াও গুণতে হচ্ছে দুই থেকে তিনগুণ বেশি। এর পরও বাড়ি ফেরার আনন্দে সবার মুখেই হাসি।
রোববার (০৩ জুলাই) সকালে রাজধানীর সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা গেছে, ঢাকা ছাড়া বাসগুলোতে যাত্রীদের উপছে পড়া ভীড়। ভাড়াও গুণতে হচ্ছে দ্বিগুণ-তিনগুণ। অন্যসব সময় টার্মিনালটি থেকে নোয়াখালীগামী বাসে ভাড়া নেয়া হতো ৩৫০ টাকা। কিন্তু রোববার নেয়া হচ্ছে ৬০০ টাকা।
কাউন্টার ম্যানেজাররা জানান, ঢাকা ছাড়ার সময় যাত্রীদের ভীড় থাকলেও ফেরার পথে যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে যে পরিমাণ খরচ হয় সে পরিমাণ ভাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। যে কারণে মালিকরা ৬০০ টাকা করে ভাড়া নিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
জানতে চাইলে হিমাচল পরিবহনের ম্যানেজার মো. রবিউল ইসলাম বাংলামেইলকে বলেন, ‘এটা সবাই জানে। কয়েকদিন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক হলে মালিক সমিতি তা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানায়। তখন তারা সম্মতি দিয়েছেন। যে কারণে আমরা বেশি ভাড়া নিচ্ছি।’
সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালেও দেখা গেছে একই অবস্থা। সেখানে যাত্রী নেয়া হলেও একটু বেশি মালামাল থাকলে তা নেয়া হচ্ছে না। তবে লঞ্চের প্রভাবশালীদের অতিরিক্ত টাকা দিয়ে মালামাল নেয়া যাচ্ছে বলে যাত্রীদের কেউ কেউ জানায়।
হাতিয়াগামী এমভি ফারহান-৩ এ গিয়ে দেখা গেছে কোথাও তিল পরিমাণ ঠাঁই নেই। এর পরও আরো যাত্রী উঠানোর জন্য লঞ্চ ছাড়া হচ্ছে না। অন্যসব দিনে কেবিন ভাড়া ১২০০ টাকা করে নেয়া হলেও গত বৃহস্পতিবার থেকে নেয়া হচ্ছে ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকা পর্যন্ত।
এদিকে লঞ্চের কেবিনগুলোর সামনের খোলা জায়গাও ভাড়া দেয়া হচ্ছে। একটি বিছানা ও একটি বালিশ দিয়ে প্রতিজন থেকে আদায় করা হচ্ছে ১০০০ টাকা।
কালিগঞ্জগামী যাত্রী ফারহানা আক্তার বাংলামেইলকে বলেন, ‘গত এক সপ্তাহ ধরে লঞ্চে শুধু ফোন করছি কেবিনের জন্য। তারা বলছে- কোনো কেবিন নেই। কিন্তু এখন দেখছি ১২শ’ টাকার কেবিন ২ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘কেবিনের সামনের ডেকের জায়গাও তারা বিক্রি করছে। সাধারণত এর ভাড়া তিনশ’ টাকা। কিন্তু নিচ্ছে এক হাজার টাকা।’
জানতে চাইলে সুজন নামে এক কেবিন বয় বলেন, ‘যাত্রীদের ভীড় বেশি। তাই তারা আমাদের কাছে আসেন। আমরা বিচানা ও বালিশের ব্যবস্থা করে দিই। বিনিময়ে তারা আমাদেরকে বকশিস দেন। তারা না আসলে তো আমরা টাকা নিতে পারি না।’
ঈদে উপকূলের গরিব শিশুদের নতুন জামা দিচ্ছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘উপকূল বাঁচাও আন্দোলন’। আন্দোলনের কর্মীরা নতুন পাঞ্জাবির দুটি বস্তা লঞ্চে উঠাতে চাইলে লঞ্চের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা শ্রমিকের মাথা থেকে মালগুলো ফেলে দেন।
তারা বলছেন, যাত্রী যাবে, মাল যাবে না। এরপর অতিরিক্ত ভাড়া দিলে মাল উঠানোর অনুমতি দেয়া হয়। এসব বিষয়ে স্থানীয় পুলিশ কন্ট্রোল রুবে অভিযোগ দিয়েও কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি বলে একাধিক যাত্রীর অভিযোগ।
এবারের ঈদে সরকারের নির্বাহী আদেশে দীর্ঘ ৯ দিন ছুটি পাচ্ছেন সরকারি চাকরিজীবীরা। প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করতে এরই মধ্যে রাজধানী ছেড়েছেন সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মজীবীরাও এরই মধ্যে বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন।
গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে রাজধানীর আকাশে বৃষ্টি ঝরছে। বৃষ্টি উপেক্ষা করে ঘরমুখো মানুষ ভীড় করছেন ট্রেন, বাস ও লঞ্চ টার্মিনালগুলোতে। তবে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অধিকাংশ যাত্রী।