বুধবার, জানুয়ারি 22, 2025

এলপিজি ব্যবহারে সতর্কতা ও সচেতনতা জরুরি

বাংলাদেশে বাসাবাড়িতে এলপিজি সিলিন্ডারের ব্যবহার অনেক বেড়েছে। তাই এলপিজি ব্যবহারে সতর্কতা ও সচেতনতা আগের তুলনায় অনেক বেশি জরুরি। পাশাপাশি সরকারেরও এ খাতের প্রতি নীতিসহায়তাসহ দৃষ্টি দেওয়া জরুরি। বাংলাদেশের বৃহত্তম এলপি গ্যাস অপারেটর ওমেরা আয়োজিত ‘স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার উপর ক্লিন ফুয়েল হিসাবে এলপিজির প্রভাব’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় এসব বিষয় উঠে এসেছে।

সোমবার ওমেরা এলপিজির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বিশ্ব স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা দিবসে ঢাকায় ওমেরার করপোরেট কার্যালয়ে রোববার অনুষ্ঠিত এ আলোচনা সভার লক্ষ্য ছিল বিশ্বব্যাপী নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর কর্মক্ষেত্রের জন্য সচেতনতা বৃদ্ধি ও সমর্থনের জন্য আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) লক্ষ্য পূরণে সহায়তা করা। ‘পরিবর্তনশীল জলবায়ুতে কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য নিশ্চিত করা’ প্রতিপাদ্যের গোলটেবিল আলোচনায় বাংলাদেশের এলপিজি খাতের বর্তমান প্রবৃদ্ধি ও এ খাতের বিভিন্ন বিধিমালার ওপর আলোকপাত করা হয়। পাশাপাশি এলপিজির স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার বিভিন্ন প্রভাবও অন্বেষণ করা হয়।

বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) চেয়ারম্যান নুরুল আমিন বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। সঞ্চালনা করেন ওমেরা এলপিজির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) তানজিম চৌধুরী। এছাড়া বিইআরসি সদস্য (গ্যাস) হেলাল উদ্দিন এনডিসি, বিস্ফোরক অধিদপ্তরের প্রধান পরিদর্শক মোহাম্মদ ফারুক হোসেন, ফায়ার সার্ভিসের উপ পরিচালক মো. কামাল উদ্দিন ভূঁইয়া, রাজউকের সদস্য মেজর (অব.) শামসুদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, সদস্য (উন্নয়ন),রিহ্যাবের সিনিয়র সহসভাপতি লিয়াকত আলী ভূঁইয়া, বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির মহাসচিব ইমরান হাসান, শেফস ফেডারেশন অব বাংলাদেশের সভাপতি  জহির খান, বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল হোটেল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি, এইচএম হাকিম আলী এবং এলপিজি অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এলওএবি) এর মহাসচিব মোহাম্মদ আহসানুল জব্বার প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন।

বিইআরসির চেয়ারম্যান নুরুল আমিন বলেন, এক সময় গ্রামের মায়েরা রান্না করার সময় ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যেতেন। এলপিজি সিলিন্ডার আসার পর সেই ভোগান্তি থেকে গ্রামের গৃহিণীরা মুক্তি পেয়েছেন। তারা চান, এলপিজির ব্যবহার আরও ব্যাপক হারে বাড়ুক। তিনি বলেন, ‘এলপিজি ব্যবহার নিরাপদ করার জন্য আমরা বিধি এবং নির্দেশিকা প্রণয়ন করবো। যাতে এ বিষয়ে দায়বদ্ধতার পাশাপাশি সচেতনতা সৃষ্টি হয়। এ খাতের অবারিত সম্ভাবনা রয়েছে। তাই  খাতভিত্তিক পরিকল্পনা খুব জরুরি।

বিস্ফোরক অধিদপ্তরের প্রধান পরিদর্শক মোহাম্মদ ফারুক হোসেন বলেন, বেইলি রোডের দুর্ঘটনাসহ গত আড়াই মাসে ঢাকা এবং গাজীপুরের তিনটি বড় ঘটনায় সিলিন্ডার বিস্ফোরণের কথা বলা হলেও তারা সিলিন্ডার বিস্ফোরণের মতো তেমন কোনো আলামত বা প্রমাণ পাননি। তিনি প্রতিটি সিলিন্ডারের গায়ে ব্যবহারবিধি ও সতর্কবাণী উল্লেখ করার ওপর গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, বর্তমানে অনেক অপারেটরকে এলপিজির লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। এসব অপারেটরের অসংখ্য ডিষ্ট্রিবিউটর রয়েছে। তিনি এলপিজি পরিবহন ও সংরক্ষণের ক্ষেত্রে ডিষ্ট্রিবিউটরদের আরও বেশি দায়িত্বশীল হওয়ার আহ্বান জানান।

রাজউক সদস্য শামসুদ্দিন আহমেদ চৌধুরী বলেন, ভবন তৈরির ক্ষেত্রে রাউজক অনেক আগে থেকেই গ্যাস সিলিন্ডারের জন্য আলাদা কাঠামো তৈরি করেছে। আগামীতে গ্যাস ট্যাংক করার পরিকল্পনা রয়েছে রাজউকের।

এলওএবি মহাসচিব মোহাম্মদ আহসানুল জব্বার বলেন, আগামীতে এলপিজি হতে পারে দেশের অন্যতম প্রধান ব্যবসা। প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ আছে এ খাতে। তবে এ শিল্পের প্রায় পুরোটাই আমদানিনির্ভর। দেশে মাত্র ২ শতাংশ উৎপাদিত হয়। দেশে এলপিজির ব্যবহার এক দশকে বহু গুণ বেড়েছে। ২০১৯ সালে ব্যবহার প্রায় ১০ লাখ টনে এবং গ্রাহক সংখ্যাও ৩৮ লাখে উন্নীত হয়েছে। ২০০৯ সালে চাহিদা ছিল মাত্র ৪৭ হাজার টনের। চাহিদা ২০৩০ সালে ৩০ লাখ টনে উন্নীত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বৈঠকে বক্তারা বলেন, কয়লার চেয়ে ৩৩ শতাংশ কম এবং তেলের তুলনায় ১২ শতাংশ কম কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমন করে এলপিজি। এলপি গ্যাসে রান্নার ফলে ধোঁয়া উৎপন্ন হয় না। সামগ্রিকভাবে বলা যায়, এলপি গ্যাস পরিবেশ ও মানুষ উভয়ের জন্যই একটি টেকসই এবং স্বাস্থ্যকর জ্বালানি।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, এলওএবির পূর্বাভাস অনুসারে, ২০৩০ সাল পর্যন্ত এলপিজির চাহিদা বার্ষিক প্রায় ৭.৪% হারে বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। যেহেতু প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুদ কমছে এবং এলপিজির দাম ওঠানামা করছে, শিল্প খাত এলপিজিকে বিকল্প জ্বালানির উৎস হিসেবে ব্যবহারে ক্রমবর্ধমান আগ্রহ দেখাচ্ছে। বাংলাদেশে এলপিজির গড় মাসিক বাজারের আকার প্রায় দেড় লাখ মেট্রিক টন। এর মধ্যে ওমেরাসহ প্রধান ৪টি অপারেটর মোট চাহিদার ৫০ শতাংশের বেশি পূরণ করছে।

সর্বশেষ খবর

BN