শেখ আব্দুল্লাহ মুন্সীগঞ্জের সিরাজদীখান থানা বিএনপির আহ্বায়ক। একই সঙ্গে তিনি আল-মুসলিম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। ব্যবসায়িক কাজে গত রোববার রাতে স্পেনে গেছেন। অথচ এ ঘটনার তিন দিন পর বুধবার সন্ধ্যায় সিরাজদীখানে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কে গাড়ি ভাঙচুর ও ককটেল বিস্ফোরণের অভিযোগে পুলিশের মামলায় তাঁকে প্রধান আসামি করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকালে সিরাজদীখান থানার উপপরিদর্শক মো. বিল্লাল হোসেন বাদী হয়ে শেখ আব্দুল্লাহসহ বিএনপির ৮১ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলাটি করেন। পরে দুপুরে উপজেলার মধ্যপাড়া ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক আজিম আল রাজী ও বালুচর ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মো. ফারুক হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এ বিষয়ে থানা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব মো. হায়দার আলী সমকালকে বলেন, ‘ঢাকার গণসমাবেশ ঘিরে নেতাকর্মীকে হয়রানির জন্য মামলা করা হয়েছে। গাড়ি ভাঙচুর ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনাও সাজানো নাটক। ওই দিন সেখানে আমাদের কোনো কর্মসূচি ছিল না। না হলে এ মামলায় যাঁকে প্রধান আসামি করা হয়েছে, তিনি গত রোববার রাতে ব্যবসায়িক কাজে স্পেনে গেছেন। স্পেন থেকে গাড়ি ভাঙচুর ও ককটেল হামলায় অংশ নেওয়া খুবই হাস্যকর।’
তবে সিরাজদীখান থানার ওসি এ কে এম মিজানুল হক জানান, ১০ ডিসেম্বর রাজধানীর নয়াপল্টনে সমাবেশের অনুমতি না দেওয়ায় বুধবার সন্ধ্যায় ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কে বিএনপি নেতাকর্মীরা জড়ো হয়ে গাড়ি ভাঙচুর ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটান। সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে মামলা করা হয়েছে। ইতোমধ্যে অভিযান চালিয়ে দু’জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ভাঙচুরের বিষয়ে আরও তথ্য পেতে তাঁদের আদালতে হাজির করে পাঁচ দিনের রিমান্ড চাওয়া হবে। বিদেশে অবস্থান করেও প্রধান আসামি হওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি এড়িয়ে যান।
এদিকে পুলিশের ওপর হামলা, ক্ষমতাসীন দলের কর্মসূচিতে ককটেল নিক্ষেপ, সংঘর্ষ ও নাশকতার পরিকল্পনার অভিযোগ এনে বিস্ফোরক আইনে আরও ১০টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় বিএনপির ৬৭০ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় ১৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
বেলাব (নরসিংদী) প্রতিনিধি জানান, উপজেলার পাটপট্টি এলাকায় বুধবার রাতে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় বিএনপির ১২ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করেন এসআই ইমরান হাসান। পরে স্কচটেপ মোড়ানো তিনটি ককটেলসহ মাসুদ রানা ও মুখলেছ মিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়।
কালিয়াকৈর (গাজীপুর) প্রতিনিধি জানান, চন্দ্রা পৌর আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও ককটেল বিস্ফোরণের মামলায় বুধবার রাতে কালিয়াকৈর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন আহমেদকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ মামলার বাদী পৌর আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের অফিস সহকারী আবদুল মান্নান শেখ আগেই সাংবাদিকদের জানান, বিয়ের দাওয়াতে থেকেও তিনি বাদী হয়েছেন। ঘটনার বিষয়ে কিছুই জানেন না।
ঘাটাইল ও সখীপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি জানান, উপজেলায় নাশকতার অভিযোগে বিএনপির ৭৮ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ। বুধবার রাতে এ মামলার চার আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্যদিকে ঘাটাইল উপজেলায় পুরোনো এক মামলার আসামি ধরতে বিএনপি নেতাকর্মীর বাড়ি বাড়ি অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ। গ্রেপ্তার এড়াতে এলাকার পুরুষরা বাড়িছাড়া বলে জানিয়েছেন বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ওবায়দুল হক নাসির। ২২ নভেম্বর ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় ৮০ জনের নামে মামলা করে পুলিশ। এ মামলায় গ্রেপ্তার বিএনপির ১০ নেতাকর্মী বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।
গজারিয়া ও লৌহজং (মুন্সীগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ছাত্রলীগ কর্মী সুমন মিয়াকে আহত করার ঘটনায় ভুক্তভোগী গতকাল বিএনপির ১০৫ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করেন। পরে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্যদিকে লৌহজংয়ের বেজগাঁও কবরস্থানে ককটেল বিস্ম্ফোরণের ঘটনায় ১০৫ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করেছেন আওয়ামী লীগ নেতা ফিরোজ আহমেদ। পরে পুলিশ যুবদলের তিন নেতাকে গ্রেপ্তার করে।
মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, বুধবার রাতে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় পুলিশ বিএনপির ৩২ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে। পরে রাতেই মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপির সহসভাপতি মোতালেবকে গ্রেপ্তার করা হয়। সদর থানার ওসি আবদুর রউফ সরকার এ তথ্য জানিয়েছেন।
নারায়ণগঞ্জ ও সিদ্ধিরগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, ককটেল বিস্ফোরণ ও নাশকতার অভিযোগে নারায়ণগঞ্জের তিন থানায় নতুন তিনটি মামলা করেছে পুলিশ। এসব মামলায় বিএনপি-জামায়াত ও গণঅধিকার পরিষদের ৭২ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতপরিচয় আরও ১২৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে বিস্ফোরক দ্রব্য আইনসহ বিভিন্ন আইনে সদর, ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় এসব মামলা করা হয়।
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গিয়াস উদ্দিন বলেছেন, ‘সব ঘটনা পুলিশের বানানো। আমাদের নেতাকর্মীরা এসব করেনি। তারা তো বাসাবাড়িতেই থাকতে পারছে না। এসব করবে কখন?’
পুলিশ বলছে, বুধবার সন্ধ্যায় পৃথক মশাল মিছিল থেকে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। পরে আলামত জব্দ এবং সদর থানার মামলায় চার ও ফতুল্লার মামলায় একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।