একদিকে চলছে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে আওয়ামী লীগের কর্মযজ্ঞ, অন্যদিকে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঝুলছে তালা। ২ মাস ৯ দিন ধরে দলটির নেতাকর্মীরা নিজেদের কার্যালয়ে আসতে পারছেন না। গ্রেপ্তার আতঙ্কে কার্যালয় এড়িয়ে চলছেন সবাই। কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী এমনকি নিরাপত্তা প্রহরীও নেই। ফলে সুনসান নীরবতা চলছে দেশের অন্যতম বৃহৎ এ রাজনৈতিক দলটির স্থায়ী ঠিকানায়। শুধু নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ই নয়, গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়সহ দেশের অন্যান্য স্থানেও দলটির কার্যালয় রয়েছে বন্ধ। এমনকি বিজয় দিবসসহ জাতীয় দিনগুলোতেও কার্যালয় খোলা হয়নি বলে জানিয়েছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা।
গত বছরের ২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশের দিন নয়াপল্টনে পুলিশের সঙ্গে দলটির নেতাকর্মীর ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এরপর থেকে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেয় পুলিশ। পরদিন সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট বিএনপি কার্যালয়ের সামনে স্টিকার দিয়ে ঘেরাও করে তদন্ত চালায়। তখন পুলিশের কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন, ‘ক্রাইম সিন’ লিখে বেষ্টনী দিয়ে ঘিরে রাখার অর্থ, ওই বেষ্টনী পেরিয়ে বিএনপি কার্যালয়ে কেউ প্রবেশ করতে বা বের হতে পারবে না। অপরাধ তদন্তের জন্য সেখান থেকে পুলিশ আলামত সংগ্রহ করছে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত বিএনপি কার্যালয় কার্যত বন্ধ থাকবে।
এর দুই দিন পর কার্যালয়ের দুই পাশে কাঁটাতারের ব্যারিকেড বসায় পুলিশ। কার্যালয়ের সামনের ফুটপাত দিয়েও সাধারণ মানুষের চলাচল বন্ধ রাখা হয়। পথচারীদের পুলিশ রাস্তার পাশ দিয়ে ঘুরে যেতে বলত। মামলা ও গ্রেপ্তার আতঙ্কে তখন থেকেই বিএনপির কোনো নেতাকর্মী কার্যালয়মুখী হননি।
গতকাল শনিবার সরেজমিন দেখা গেছে, কার্যালয় ঘিরে আগের মতো নিরাপত্তাবলয় না থাকলেও অদূরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অবস্থান আছে। কার্যালয়ের ভেতরে নিরাপত্তা প্রহরীর টেবিল পড়ে রয়েছে আড়াআড়িভাবে। যতদূর দেখা যায়, তাতে ময়লা আর ধুলার স্তূপ জমেছে। লিফলেট, পোস্টারের ছেঁড়া অংশ, পানির খালি বোতল ছাড়াও উল্টে রয়েছে দুটি প্লাস্টিকের চেয়ার। আরেকটি চেয়ারে নির্বাচন কমিশনের চিঠি ছাড়াও আরও কিছু চিঠি পড়ে আছে। সেসব চিঠিতেও ধুলা জমেছে। আলো না থাকায় কার্যালয়ের ভেতরে এখন ভূতুড়ে পরিবেশ বিরাজ করছে। কোনো নেতাকর্মীকে দেখা যায়নি এদিনও।
জানা গেছে, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে থাকায় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের মূল ফটকের তালা খোলার বিষয়টি। ২৮ অক্টোবরের পর নয়াপল্টন কার্যালয়ের লাইব্রেরিয়ানকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। গুলশান কার্যালয় থেকে বের হওয়ার পথে দলের মিডিয়া সেলের তিনজন অরাজনৈতিক সদস্যকেও গ্রেপ্তার করা হয়। এর আগেও নয়াপল্টন কার্যালয়ে যখন বিভিন্ন সময়ে পুলিশ অভিযান চালিয়েছে, তখন কর্মীদের গ্রেপ্তার করেছে, কারাগারে পাঠিয়েছে। এখন তারা সবাই অপেক্ষা করছেন একটি স্বাভাবিক পরিবেশের, যখন আবার রাজনীতি করার সুযোগ পাবেন সবাই। তখনই কার্যালয়ে যাওয়ার চিন্তা করছেন দলের নেতারা।
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘সরকার পরিকল্পিতভাবে দেশে একতরফা নির্বাচন আয়োজনে সব কলাকৌশল অবলম্বন করেছে। দেশ থেকে বিরোধী দল ও মতকে সরিয়ে দিতে তাদের মাস্টারপ্ল্যানের অংশ হিসেবে সারাদেশে ক্র্যাকডাউন করে একটি ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। দেশে ফ্যাসিজম জেঁকে বসেছে। একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে বিরোধী দলের প্রধান কার্যালয় এ রকম অবরুদ্ধ করার কোনো নজির নেই। এর আগেও তারা একাধিকবার বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে হামলা করেছে, অবরুদ্ধ করেছে, কার্যালয়ের মধ্যে তাণ্ডব চালিয়েছে, লুটপাট করেছে। এটা তাদের ঐতিহ্য।’
রিজভীর দাবি, কার্যালয়ে যাওয়ার মতো পরিবেশ নেই তাদের। শুধু নেতাকর্মী নন, কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও নিরাপদ নন। এমন পরিস্থিতিতে কবে আবার কার্যালয় খুলবে তা নিশ্চিত জানেন না তিনি।