বৃহস্পতিবার, জানুয়ারি 23, 2025

নির্বাচনী সহিংসতা: উদ্বিগ্ন জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ও সংখ্যালঘুরা

নির্বাচন ঘিরে দেশের বিভিন্ন স্থানে নাশকতা ও সহিংসতার ঘটনায় উদ্বিগ্ন প্রকাশ করেছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। এসব ঘটনা তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ তিন দপ্তরে চিঠি দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এদিকে নির্বাচনের পরও সহিংসতার আশঙ্কা প্রকাশ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি দিয়েছে কয়েকটি নাগরিক সংগঠন। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নেতাদের অনেকে মনে করছেন, বিগত নির্বাচনগুলোর মতো এবারও নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতার লক্ষ্যে পরিণত হতে পারেন তাদের সম্প্রদায়।

এ বিষয়ে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত সমকালকে বলেন, ‘আমাদের অবস্থা ঘরপোড়া গরুর মতো– সিঁদুরে মেঘ দেখলেই ভয় পাই। ১৯৯১ ও ২০০১ সালের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ব্যাপক ভিত্তিতে সহিংসতার লক্ষ্যবস্তু হয়েছিল সংখ্যালঘুরা। এবার নির্বাচন পরিস্থিতি কিছুটা ভিন্ন হলেও সহিংসতা হচ্ছে। সার্বিক পরিস্থিতিতে আমরা উদ্বিগ্ন।’

তিনি আরও বলেন, ‘এরই মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, নির্বাচন কমিশন, মানবাধিকার কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে শঙ্কা ও উদ্বেগের কথা জানিয়ে চিঠি দিয়েছি। আশা করছি, নির্বাচনের পরও অন্তত এক সপ্তাহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তায় বিশেষ ব্যবস্থা নেবে।’

হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ একাধিক চিঠিতে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকাকে ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করে নাগরিকদের নির্বিঘ্নে ভোটদানের ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে।

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক চন্দ্রনাথ পোদ্দার বলেছেন, ‘উদ্বেগ আছে, থাকবেই। এ জন্য নিরাপত্তার বিষয়ে দফায় দফায় সরকারের সংশ্লিষ্টদের বলা হয়েছে। অনেক এলাকায় বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়ার পরও সংখ্যালঘু, নারী এবং অপেক্ষাকৃত দুর্বলদের ওপর হামলা হয়েছে। তবে পরিস্থিতি যত খারাপই হোক, সরকার ও নির্বাচন কমিশন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তায় পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেবে বলে আমরা আশাবাদী।’

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের পাঠানো পৃথক চিঠিতে বলা হয়েছে, সহিংস রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সুস্থ রাজনৈতিক চর্চার বদলে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে। কমিশন মনে করে, তদন্ত করে নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া দরকার, যাতে ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকানো সম্ভব হয়।

চিঠিতে জনসাধারণের অবাধ, শান্তিপূর্ণ ও সহিংসতামুক্ত চলাফেরা নিশ্চিতেও ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।

জানতে চাইলে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন আহমেদ সমকালকে বলেছেন, ‘ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত। ২০০১ সালে নির্বাচনী সহিংসতা ব্যাপক আকার নিয়েছিল, যা এখনও পীড়া দেয়। এর পর আরও তিনটি নির্বাচনে সহিংসতা হয়েছে। তবে ২০১৪ সালের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সহিংসতায় অনেক ভোটকেন্দ্র জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে কিছু নাশকতার ঘটনা ঘটেছে, যা নিয়ে কমিশন উদ্বিগ্ন।’

তিনি আরও বলেন, ‘নাশকতার ঘটনাগুলো তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের চিঠি দিয়েছি। আশা করছি, এসব ঘটনা কঠোরভাবে পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তায় পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সমকালকে বলেন, সারাদেশে যেসব নাশকতাকারী গ্রেপ্তার হচ্ছে, তারা বিএনপির নেতৃত্বাধীন একই চক্র। নির্বাচনের মাঠে সেনা, পুলিশসহ বিভিন্ন বাহিনী দায়িত্ব পালন করছে। সবাই সজাগ। প্রতিটি ঘটনায় যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

সর্বশেষ খবর

BN